রুশাইদ আহমেদ: দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় পর আবারও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে চলেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবরা। আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে অংশ নিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরের পর ঢাকা পৌঁছাবেন।
বহুল আলোচিত এই বৈঠকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি থাকবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়, যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন আমনা বালুচ। বৈঠকের পরে আমনা বালুচ সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক কার্যত স্থবির অবস্থায় পৌঁছেছিল। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার অভাব, ঐতিহাসিক মতপার্থক্য এবং রাজনৈতিক দূরত্ব এই সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছিল। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছে উভয় দেশ।
ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারের বৈঠকে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ, ভিসা ইস্যু ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠক শুধু দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত পরিস্থিতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে এক নতুন সম্পর্কের সূচনা হতে পারে। ফলে বদলে যেতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, বৈঠকে শুধু বর্তমান পরিস্থিতি নয়, ইতিহাসসিদ্ধ কিছু অনিষ্পন্ন বিষয়ও আলোচনায় আসবে। তার মতে, সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে এটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ ছাড়া, পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের আসন্ন ঢাকা সফর নিয়েও আলোচনা হবে এই বৈঠকে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের পর এই প্রথমবারের মতো কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করতে যাচ্ছেন। সফরের প্রস্তুতি এবং আলোচ্য বিষয়ের রূপরেখা ঠিক করতেই জসিম-বালুচ বৈঠকটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ইসহাক দারের সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হবে এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পথ সুগম করার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এই সফর এবং বৈঠকগুলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।