খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় বাঙালি যুবক কর্তৃক ত্রিপুরা তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন।
শুক্রবার(১৮জুলাই) বিকালে রাবির প্যারিস রোডে রাবি ও রুয়েটের পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘নিজ ভূমিতে আদিবাসী নারী অনিরাপদ কেন?’, ‘পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন কর’, ‘জুম্ম নারীদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর’, ‘পর্যটনের নামে দখল নয়, ধর্ষণ নয়’, ‘রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মব হত্যা বন্ধ কর’সহ নানা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে তারা ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান । একইসঙ্গে ভুক্তভোগীর মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও তোলেন তারা। বিচার নিশ্চিত না হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অচল করে দেওয়ার হুশিয়ারিও দেন তাঁরা।
রাবি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্স চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা যদি জেগে উঠে আপনারা দমিয়ে রাখতে পারবেন না। আপনারা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সচেতন হন। আমাদের যারা অন্যদেশ থেকে আসার কথা বলেন তারা সাবধান হন। বাংলাদেশ একটি সম্প্রীতির রাষ্ট্র হোক এটাই চাই৷ খাগড়াছড়িতে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তা প্রশাসন পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা এই ধর্ষকদের সাফাই গেয়েছে। যদি এমন হয় ২৪ এর যে আকাঙ্ক্ষা তা কোনোদিন পূরণ হবেনা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জেমি সাইলোক তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আমি যে একজন পাহাড়ি স্বাধীন নাগরিক এবং বাঙালি নাগরিক তা ভাবতেও লজ্জা লাগে। আমরা সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে অনেকে আমাদের গুরুত্বই দেয়না। পাহাড় থেকে সমতলে সমান তালে ধর্ষণ হচ্ছে কিন্তু তার কোনো সমাধান হচ্ছে না। গতবছরের জুলাই থেকে এর হত্যা,ধর্ষণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে।’
রুয়েট শিক্ষার্থী বিনয় কুমার চাকমা বলেন, বাংলাদেশের কোন ধর্ষণেরই বিচার হয়নি। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে এর হার তো একদম শূন্য। গত কয়েক মাস আগে পাহাড়িদের উপর মব হামলা হয়েছিল এবং রেগুলার ধর্ষণ হয়ে আসছে। কিন্তু আমরা কোনো অপরাধেরই বিচার পাচ্ছি না। গতকাল যখন আমাদের লোকেরা খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে, তখন সেনাবাহিনী আমাদের ভাইদের উপর লাটি চার্চ করে। এই হলো আমাদের অবস্থা।
বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম বলেন, এই পর্যন্ত বাংলাদেশে ধর্ষকের কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হতে দেখিনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত আদিবাসী নারীরা ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো বিচার রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে পারেনি। আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের থাকলেও তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের নামে আদিবাসীদের বিভিন্ন জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এটা আদিবাসীদের অস্ত্বিত্ব হুমকির মুখে ফেলে।
পরবর্তীতে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এসময় রাবি এবং রুয়েটের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বুধবার খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ার লতিবান এলাকায় রথযাত্রা দেখতে গিয়ে এক ত্রিপুরা তরুণী ছয়জন বাঙালি যুবকের পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে।