সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এর নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোঃ আব্দুল মজিদ। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনকে কিভাবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে, শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে, রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুনভাবে গড়ে তুলবেন তা নিয়ে নতুন উপাচার্যের কাছে বিভিন্ন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা । শিক্ষার্থীদের এই প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় বিডিএন71 প্রতিনিধি মোঃ ইমদাদুল ইসলাম।
শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার বিষয়ে ২০১৯-২০২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন যে, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা হলো একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা যেখানে তারা তাদের একাডেমিক এবং ব্যক্তিগত বিকাশের সর্বোচ্চ সুযোগ পাবে।শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি, এবং ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও উদ্ভাবনী শিক্ষণ পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা থাকবে।এই জন্য আমাদের প্রয়োজন যথেষ্ট সংখ্যক যোগ্য শিক্ষক, আধুনিক ল্যাবরেটরি, এবং সুসজ্জিত লাইব্রেরি ।
সকল প্রকারের রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা করে ২০১৯-২০২০ সেশনের শিক্ষার্থী মোঃ জুয়েল রানা বলেন যে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকার প্রভাব যে কী হতে পারে তার ভয়াবহ রূপ ইতোমধ্যেই আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি । এইজন্য আমরা এই একই ভুল আবারো হতে দিতে পারি না । সুতরাং আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের এখন চাওয়া যেইটা সেইটা হচ্ছে একটি সুন্দর রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস ।এর আগে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো যত নির্যাতন যত ধরনের অনিয়ম করে গেছেন এখন আমরা চাইনা যে আবার কোন ধরনের রাজনৈতিক দল এখানে আসুক এবং আবারো শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পড়ালেখার মধ্যে ব্যাঘাত ঘটাক ।আমি চাই রাজনীতি মুক্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল নিরাপদ একটি ক্যাম্পাস । যেখানে সবাই মুক্তভাবে চলাফেরা করবে ।
যবিপ্রবির গবেষণা খাতকে আরো গুরুতের সহিত বিবেচনার বিষয়ে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন যে,আমরা জানি যবিপ্রবি একটি গবেষণানির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়। সাম্প্রতিককালে এই বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় অনেক সুনাম কুরিয়েছে। তাই নব নিযুক্ত উপাচার্য স্যারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তিনি যেন শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে আরো উৎসাহ প্রদান, গবেষণার জন্য সুযোগ তৈরি এবং এর পিছনে পর্যাপ্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পিত শিক্ষা, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক বা আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রম উন্নয়নে গভেষনাগার, লাইব্রেরী ও অন্যান্য শারীরিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান সহ বিশ্ববিদ্যালয় এর জায়গা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবেন ।
ক্যাম্পাসে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়ে ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী মুর্তজা বশীর বলেন যে, বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে যে অনেক শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসের ভিতরে অবাধেই ধূমপান করছে এই বিষয়ে তারা কাউকে তোয়াক্কাই করছে না ।যার ফলে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীই তাদের প্রভাবে আস্তে আস্তে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে ।যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরমভাবে বিপাকে পড়ছে । সার্বিক পড়ালেখার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এই জন্য যত দ্রুত সম্ভব সরকার কর্তৃক প্রণীত ২০০৫ সালের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে । এছাড়া ও তিনি হলের ডাইনিং এর খাবারের বিষয় নিয়ে আরো বলেন যে আমাদের ডাইনিং এর খাবারের মান উন্নত করতে হবে।
আমাদের হলের ডাইনিং গুলোর খাবারের মূল্য যেন বাহিরের হোটেলগুলোর সাথে বরাবরই টেক্কা দিচ্ছে, কিন্তু সেই তুলনায় খাবারের মান পাচ্ছি না। যার কারণে আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই নিজেদের ডাইনিং রেখে, বাহিরে খেতে হচ্ছে । মাননীয় উপাচার্যের নিকট দাবি রইল যাতে তিনি হল প্রভোষ্ট স্যারদের সাথে আলোচনা করে সুলভ মূল্য এবং খাবারের মান উন্নয়ন নিশ্চিতের বিষয়ে কাজ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল প্রকার দুর্নীতি মুক্ত করার প্রসঙ্গে ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থী জালিস মাহমুদ বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বাজেট বাস্তবায়নে সকল প্রকার দুর্নীতি এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগসহ সকল প্রকার নিয়োগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন চাই। মেধা, যোগ্যতা ও রিকোয়্যারমেন্টসের ভিত্তিতেই সকল প্রকার নিয়োগের বাস্তবায়ন চাই। দলীয় ভিত্তিতে অগ্রাধিকার কোনোভাবেই কাম্য নয়। এছাড়া প্রশাসনিক সকল দপ্তরে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দাবি-দাওয়া পেশের সুযোগ এবং উহার যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।
এছাড়াও যবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়া দ্রুত চালুর বিষয়ে কথা বলেন ২০২২-২০২৩ সেশনের শিক্ষার্থী স্বর্নালী বিশ্বাস।তিনি বলেন যে,অবিলম্বে যবিপ্রবির ক্যাফেটেরিয়া চালু করা এবং ক্যাম্পাসের ভিতরে কিছু টং দোকান এর ব্যবস্থা করতে হবে । ক্যাফেটেরিয়া হলো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির প্রতীক।যা বিশ্ববিদ্যালয়টির সৌন্দর্য বহন করে । কিন্তু অনেক দিন ধরেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাফেটেরিয়া অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে ।আমরা চাই আমাদের ক্যাফেটেরিয়া ব্যবস্থাটা যত দ্রুত সম্ভব সচল করা । যাতে আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে পারি । তাছাড়া আমাদের নাস্তা করা বা শুকনো খাবার খাওয়ার জন্য ক্লাসের বাহিরে অনেকটা দূরে যাওয়া লাগে। ক্লাসের চাপে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না।যা আমাদের জন্য খুবই ক্লান্তিকর । সুতরাং আমাদের ক্যাম্পাসের ভিতরেই যদি কোনো শুকনো খাবার দোকানের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের জন্য এটা অনেক ভালো হয়।
আশা করি ক্যাম্পাসে আমাদের অভিভাবক হিসেবে আমাদের ভিসি স্যার আমাদের এই দাবিগুলো আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করবেন আমরা স্যারের কাছে সেই প্রত্যাশা করি।