অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলো সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে।জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে সংস্কার কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠিত দ্য বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
বিশ্বের সংকট ও বাংলাদেশের অবস্থান
ড. ইউনূস বলেন, বর্তমান সভ্যতা নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনুদানভিত্তিক অর্থ সহায়তা প্রত্যাশা করছে। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, যা গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে।
গাজায় চলমান সহিংসতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী নিন্দার পরও গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। এটি শুধুমাত্র আরব বা মুসলিম বিশ্ব নয়, বরং গোটা মানবজাতির জন্য উদ্বেগের বিষয়। একই সঙ্গে ইউক্রেন সংকট নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধও অনতিবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। কেননা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে এটি।
এশিয়ার অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি
অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এশিয়াকে একটি টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে হবে।
খাদ্য ও কৃষি খাত নিয়ে তিনি বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে সম্পদ-দক্ষ কৃষি কার্যক্রমে উৎসাহ দিতে হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আহ্বান জানান তিনি।
নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের আহ্বান
ডিজিটাল উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তথ্য ও প্রযুক্তি ভাগ করে নেওয়া এবং উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা জরুরি। ডিজিটাল সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতা আমাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ সভ্যতা হতে হবে আত্মরক্ষা ও আত্মনির্ভরশীলতার ভিত্তিতে গঠিত। ভোগের মাত্রা কমিয়ে মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা এবং সামাজিক ব্যবসাকে অর্থনীতির মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করার ওপর জোর দেন তিনি।
এশিয়ার যুবসমাজ ও উদ্যোক্তাদের জন্য বোয়াও ফোরামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য এশিয়াকে আরও উন্নত করতে হবে। এ লক্ষ্যে, তিনি তিন-শূন্য নীতির কথা বলেন—শূন্য কার্বন নির্গমন, শূন্য সম্পদের কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সম্মাননা
শুক্রবার বেইজিংয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।
এছাড়া, আগামী ২৯ মার্চ তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিকেইউ) বক্তৃতা দেবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে। একই দিনে তিনি দেশে ফেরার কথা রয়েছে।