নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশের হটলাইন সেবার পাশাপাশি শর্টকোড চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি পুলিশের ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় সরকারের চারটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের মধ্যে একটি। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কমান্ড অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকার। এছাড়াও, অভিযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সফটওয়্যার, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড, অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং মামলা বা এফআইআর করার মতো আধুনিক সেবা চালু করার কাজও চলছে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘বর্তমানে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩-এর পাশাপাশি ৩৩৩৩ নম্বর ডায়াল করে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ করা যাবে। এছাড়া, ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সেবা অপশনে গিয়ে ৩ নম্বর চাপলেও কলটি পুলিশের কল সেন্টারে ফরোয়ার্ড করা হবে। নারীরা যাতে নির্দ্বিধায় অভিযোগ জানাতে পারেন, সেজন্য কল সেন্টারে শতভাগ নারী কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে, ৯৯৯ লাইফলাইন সেবা এবং এর কল সেন্টার ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আপাতত ৩৩৩৩ সেবাকে ৯৯৯-এর সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। কল সেন্টারে নারী কর্মীদের নিয়োগের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।’
এছাড়া, অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে এবং অনলাইনে এফআইআর করার সুবিধা চালু করা হবে। কল সেন্টারে প্রোফাইল ডাউনলোড হওয়ার পর কলটি সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানায় স্থানান্তর করা হবে। বর্তমানে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ফোন নম্বরের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে বলে জানান ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আরও জানান, পুলিশের কমান্ড অ্যাপের প্রোটোটাইপ তৈরির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে অ্যাপটির আরও উন্নয়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন, যা সময়সাপেক্ষ এবং তথ্য পাচারের ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ‘পুশ টু টক’ অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে তথ্য পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা থাকবে।’
পুলিশ কমান্ড অ্যাপে কর্মকর্তাদের যোগাযোগের জন্য কয়েকটি স্তর থাকবে। টিয়ার-১-এ থাকবেন পুলিশের আইজি এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা। টিয়ার-২-এ থাকবেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার এবং রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারসহ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সবশেষে থাকবেন থানা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে, থানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখনই কমান্ড অ্যাপে যুক্ত করা হবে না।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘বর্তমানে অভিযোগ তদন্ত বা কোনো ঘটনা ঘটলে হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য প্রচলিত পদ্ধতিতে যোগাযোগ করা হয়। পুলিশ কমান্ড সেন্টারের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা সারাদিন এসব কাজে ব্যস্ত থাকেন। এই পুরো প্রক্রিয়াকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আদলে একটি ইন্সিডেন্টস ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে।’
এই ট্র্যাকিং সিস্টেমে সব ধরনের মেসেজ ও যোগাযোগ সংরক্ষণ করা হবে, যার মাধ্যমে যেকোনো অপরাধের ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সহজেই জানা যাবে। এর ফলে সেবা প্রদান সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হবে এবং পুলিশ সদস্যদের কাজের চাপও কমবে।