গঙ্গা নদী শুধু একটি জলধারা নয়; এটি একটি ঐতিহ্য, সভ্যতা, এবং জীবনের প্রতীক। হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত গঙ্গা প্রাচীন ভারতের সভ্যতাগুলোর মূল আধার। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের ফলে এই নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বিঘ্নিত হয়েছে।
১৯৬০-এর দশকে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ ভারতীয় রাজনীতির একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এটি পরিবেশ, স্থানীয় জীববৈচিত্র্য এবং নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারসহ পরিবেশবিদরা বহুবার ফারাক্কা বাঁধ ভাঙার দাবি তুলেছেন।
গঙ্গার গুরুত্ব ও সমস্যাবলি
১. ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
গঙ্গা হিন্দু ধর্মে পবিত্র নদী হিসেবে বিবেচিত। প্রতি ১২ বছর পর আয়োজিত কুম্ভ মেলায় বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত গঙ্গায় ডুব দিয়ে নিজেদের পাপমুক্ত করেন বলে বিশ্বাস করেন।
২. পরিবেশগত প্রভাব:
ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গার প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এর ফলে নদীর জলস্তর বেড়ে বিহারসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়।
৩. জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তি:
গাঙ্গেয় ডলফিনসহ নদীর অনেক প্রজাতি বাঁধ ও দূষণের কারণে বিলুপ্তির পথে।
৪. আন্তর্জাতিক সমস্যাবলি:
ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশেও পানি সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে এবং কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে।
সমাধান ও পদক্ষেপ
১. ফারাক্কা বাঁধের পুনর্মূল্যায়ন:
বাঁধের কার্যকারিতা এবং এর পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
২. প্রাকৃতিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার:
গঙ্গার প্রাকৃতিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে বাঁধের নকশা বা কার্যক্ষমতা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
৩. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমন্বিত জল ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রয়োজন।
৪. নদীর জীবন্ত সত্তার স্বীকৃতি:
উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী গঙ্গাকে জীবন্ত সত্তার মর্যাদা দিলে নদীর সুরক্ষায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।
গঙ্গার মুক্তি শুধু ভারতীয়দের নয়, এই অঞ্চলের প্রকৃতি এবং মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। মা গঙ্গাকে তার চিরন্তন গন্তব্যে বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হতে দেয়া উচিত, যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
আরইউএস