ইসরায়েলের মিলিটারী ইন্টেলিজেন্সকে চ্যালেঞ্জ করা প্যালেস্টাইন রেজিস্টেন্স হামাসের সাথে ইরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠা ফিলিস্তিন রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। হামাসের ক্ষমতা ও শক্তির টার্নিং পয়েন্ট বলা যায় ইরানের গেমপ্লেয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশকে। তবে এই যাত্রা এত সহজে হয় নাই। কারণ একসময়কার ইরান ছিল মধ্যপ্রাচ্যে নন-আরব রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের বন্ধুরাষ্ট্র। ইসরায়েলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানী তেলের উৎস ছিল ইরান। বিপরীতে অস্ত্রের মার্কেট গড়ে তুলেছিল ইসরায়েল ইরানের ভূমিতে। কিন্তু পরবর্তীতে সম্পর্ক পুরোপুরি উল্টো হয়ে যায়। ইসরায়েল হয়ে যায় অন্যতম শত্রু এবং ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যে হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ইস্যু।
শুরুটা ইরানের ইসলামিক বিপ্লবকে কেন্দ্র করে হলেও ইরানের মধ্যে প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলন জারি ছিল আগে থেকেই। শিয়া অথোরিটি মারজি ও বামপন্থী দল থেকে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন দেওয়া হতো শাহ রেজিমের সময়কালে। পরবর্তীতে আমেরিকার পাপেট শাহ রেজিমের পতন ঘটে আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ইসলামিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে।
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পরেই ইরান ফিলিস্তি’ন ইস্যুতে মনোযোগী হয়ে উঠে। ইরান রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে ঘোষণা করে কুদস দিবস অথবা জেরুজালেম দিবস হিসেবে। সেসময় পিএলও লিডার ইয়াসির আরাফাত ইরান ভ্রমণে যান। ইরানে ফিলিস্তি’ন অ্যাম্বেসী চালু করা হয় যেখানে ইরানের বিপ্লবপূর্ববর্তী শাহ রেজিমগুলোতে ইজ্রায়েলি লবিং চলতো। কিন্তু এই সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধান বাধা সৃষ্টি হয় ১৯৮০ সালে।
১৯৮০ সাল থেকে ইরাক-ইরান যুদ্ধ শুরু হয়। পিএলওয়ের সাথে ইরানের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয় এই সময়টাতেই। আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্যালেন্সে রাখার জন্য পিএলওয়ের সুপ্রিম লিডার ইয়াসির আরাফাত ইরানের সাইড থেকে সরে আসতে শুরু করেন। অন্যদিকে, ১৯৮২ সালে ইরান লেবাননে হেজবু’ল্লাহর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান নেটওয়ার্কিংয়ে মনোযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়াও বিভিন্ন ছোট ছোট অ্যান্টি-ইসরায়েল দলগুলো পিছন থেকে পরিচালনা করতে থাকে। কিন্তু কীভাবে?
১৯৮২ সালে পিএলওয়ের লেবানিজ ফ্রন্ট আবু নাদাল অরগানাইজেশনের অপারেশনে ব্রিটেনে নিযুক্ত ইসরায়লের রাষ্ট্রদূত স্লোমো আরগভকে হত্যা করা হয়। গুপ্তহত্যার জন্য ইসরায়েল পিএলওকে দায়ী করে। এরই প্রেক্ষিতে একই সালের জুন মাসে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স লেবাননে পরিচালনা করে অপারেশন পিচ ফর গ্যালিলি । ঠিক এই সময়টাতেই লেবাননে হেজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত হয় বিপ্লবী আয়াতুল্লাহ খোমেনীর মডেলে এবং “হেজবুল্লাহ” নামকরণ তিনি নিজেই করেন। সংগঠনটির পিছনে ছিল ইরানের ইসলামিক রিভোলিউশনারি গার্ড কোর্পসের ১৫০০ জন সদস্যের অবদান। ১৯৮৫ সালে হেজবুল্লাহ তাদের ম্যানিফেস্টোতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে তাদের লক্ষ্য যেকোনো উপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করা। এভাবেই ইরানের তত্ত্বাবধানে হেজবুল্লাহ এন্ট্রি নেয় ফিলিস্তিনের পাশের রাষ্ট্র লেবাননে। ইরানের তৃতীয় যাত্রা শুরু হয় প্রথম ইন্দিফাদার টাইমলাইনে। ১৯৮৭ সালে। ইরান ফিলিস্তিনে জেঁকে বসা সকল কলোনিয়াল শক্তির বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সেক্যুলার ও ইসলামিস্ট উভয় গ্রুপগুলোর পক্ষে স্টেটমেন্ট দিতে শুরু করে জোড়ালোভাবে।
প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদের নেটওয়ার্কিং প্রথম ইন্দিফাদার সময়ে লেবানন ও সিরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে হেজবুল্লাহ ও ইরানের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্কের ্মাধ্যমে। এই ব্যাপা্রে হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মিয়ার হাটিনাও বেশকিছু স্টেটমেন্ট দেন যেখানে তিনি দাবি করেন যে, ইসলামিক জিহাদকে ইরান সরাসরি সাহায্য করে আসছে। ফলে, তাদের বেশ কিছু ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে ওঠে। প্রথম ইন্দিফাদার আগে গাজা ও পশ্চিম তীরের মুসলিম ব্রাদারহুডের বক্তা আজ্জাম তামিমি ইজ্রায়েল অকুপেশন ফোর্সের বিরুদ্ধে ইসলামিক জিহাদের সামরিক সংঘাত নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ইন্দিফাদা হয় এবং প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ জড়িয়ে পড়ে খণ্ডযুদ্ধে।
১৯৯১ সালে ইজ্রায়ে’ল-ফিলিস্তি’ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্পেনের মাদ্রিদে একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইজ্রায়ে’ল ও আরব রাষ্ট্র (লেবানন, সিরিয়া ও জর্ডান)-কে নিয়ে স্পেনের তত্ত্বাবধানে এবং আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্যোগে যে মাদ্রিদ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়, সেই কনফারেন্সকে ইরান আখ্যা দেয় প্রো-ইজ্রায়ে’লি সম্মেলন হিসেবে। এর কাউন্টারে এই সম্মেলনের ঠিক আটদিন আগে তেহরানে একটা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে হেজবুল্লাহ, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ, হামাস এবং ৪০টা মুসলিম্প্রধান রাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ১৯ অক্টোবরে প্যালেস্টিনিয়ান রেজিস্টেন্স অর্গানাইজেশনগুলো একটা ফোরামে অংশ নেয়। ফোরামটির নাম দেয়া হয় “ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স টু সাপোর্ট দ্য প্যালেস্টিনিয়ান পিপল’স ইসলামিক রিপাবলিক”।
এই ফোরাম পরবর্তীতে জন্ম দেয় “দ্য অ্যালায়েন্স অব দ্য টেন ফাজাইল” এর যার সাথে জড়িত ছিল পিএফএলপি, ডিএফএলপি, ফাতাহ, আল সাইকা, পিএলএফের মতো দশটা সংগঠন। এর সাথে পিআইজে-ও যুক্ত ছিল। ফোরামটি অসলো অ্যাকোর্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং প্যালেস্টাই’নি অথোরিটিকে বয়কট করা শুরু করে।
ইরান পার্লামেন্টে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিল পাশ করে। অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয় যে, ইসলামিক ফোর্সের মাধ্যমে সরকারী ও বেসরকারী খাত ও সংগঠন থেকে ফান্ড করা হবে ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহায়তার জন্য। ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খোমেনি ও তার সাক্সেসর আলি খোমেনি ঘোষণা করে দেয় যে, যেকোনোভাবে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে সমর্থন করা মুসলমানদের জন্য হারাম। সেসময় হামাস তাদেরকে স্বাগতম জানায় এবং সম্পর্ক আস্তে আস্তে আগাতে থাকে। টার্নিং পয়েন্ট আসে ১৯৯০ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়। হামাস ১৯৯১ সালের অক্টোবরে ইরানে দাপ্তরিক চিঠি পাঠায় তাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য। এর ধারবাহিকতায় এক বছর পরে ফেব্রুয়ারিতে ইরানের রাজধানী তেহরানে হামাসের অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর মাধ্যমে হামাসকে ইরানের সম্পূর্ণ স্বীকৃতি প্রদানের ঘটনা নিশ্চিত হয়। বিপরীতে ওয়েস্ট ফ্রন্ট থেকে সমালোচনা শুরু হয় ইরানকে নিয়ে। পিএলও এক্ষেত্রে চুপ থাকে না। ইরান হামাসকে প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য পাঠাতে শুরু করে- এমন বিবৃতি প্রকাশ পায়। ইরান ও লেবাননের রিভোলিউশনারি গার্ড বেসগুলোতে হামাসের মিলিটারী উয়িং আল কাসসাম বিগ্রেডের যোদ্ধাদেরকে মিলিটারী ট্রেনিং দেয়া শুরু হয়। এবং এসব সাহায্য অব্যাহত থাকে গাজা উপত্যকার নিচে নির্মিত শতশত আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের মাধ্যমে।
হামাসের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা জানায় পিএলওয়ের অফিসিয়ালরা। পিএলও নেতাদের সরব ভূমিকা হামাসকে নিয়ে আরব বিশ্বে সন্দেহ তৈরীতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিল। অন্যদিকে হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে সমর্থন করার জন্য ইজরায়েল মিডিয়া কভারেজে বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডা ছড়াতে শুরু করে। মিডিয়া কভারেজের মাধ্যমে স্টেটমেন্ট আনা হয় যে, হামাস আরব বিশ্ব থেকে সরে গিয়ে ইরানের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। কিন্তু হামাসের লিডাররা বরাবর বলে গেছেন যে, তারা ফিলিস্তিন ইস্যুতে সকলেরই সাহায্য চায়, আরব বিশ্ব ও ইরান সবাইকে তাদের প্রয়োজন। হামাসের সাবেক প্রতিনিধি ইমাদ আল-আলামি বারবার অস্বীকার করেছেন হামাসকে ইরানের সরাসরি সাহায্যের ব্যাপারটা। এই তথ্যগুলো সাধারণত চালানো হত হামাসকে দাবিয়ে রাখার জন্য ফিলিস্তিনের ইন্টারনাল পলিটিক্সের অংশ হিসেবে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি থেকে হামাস বুঝতে পারে যে, শুধু ইরানের উপর নির্ভরশীলতা রাখলে তাদের সাথে আরব বিশ্বের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকবে, যেই চিন্তা থেকেই পিএলও ইরানের সাইড থেকে এক সময় সরে আসে। হামাস সম্পর্ক ব্যালেন্স করতে শুরু করে। তবে ইরানের থেকে নিজেদের অবস্থান সরিয়ে নেয় না। ১৯৯৮ সালে জেলমুক্তি পেয়ে হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়েখ আহমেদ ইয়াসিন ইরানভ্রমণ করেন এবং তার পক্ষ থেকে ইরানের প্রতি সকল প্রকার সাহায্যের কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং শায়েখ ইয়াসিনের নেতৃত্বে ইরান ও হামাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও ত্বরান্বিত হয়।
ফিলিস্তিনে ২০০০ সাল শুরু হয় দ্বিতীয় ইন্দিফাদার মাধ্যমে। এই সময় প্যালেস্টাইন অথোরিটি হামাস ও ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধাদেরকে বন্দি করে, তাদেরকে ইয়াসির আরাফাত মুক্ত করে দেন যার জন্য ইরান থেকে ফাতাহ পার্টিকে অফিসিয়ালি ধন্যবাদ জানানো হয়। অন্যদিকে, পিআইজে ইরানের এজেন্ডায় পরিচালিত হতে থাকে। দলটি হামাস ও ফাতাহ পার্টির তুলনায় অনেক ছোট হলেও, তাদের অনেক দূর্ধর্ষ ও সাহসী মিলিট্যান্ট অপারেশনের নজির আছে। ওয়েস্টের থিংকট্যাংকগুলোর মতে, ১৯৮৯ সাল থেকে তাদের পরিচালিত সুইসাইড মিশনের পিছনে ছিল ইরানের শিয়া মিলিট্যান্ট সংগঠনগুলোর থেকে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ। এছাড়াও ইরানের ব্যাক’আপে হামাস ও পিআইজে’র মতো সুন্নি সংগঠনগুলোর কাছে অস্ত্র সাহায্য আসতে শুরু করে গোপনে, সাথে বিভিন্ন মিলিটারী ট্যাকটিক্সের প্রশিক্ষণ। ২০০১ সালে ইরান ফিলিস্তিনিদের ইন্দিফাদার সমর্থনে সম্মেলন আয়োজন করে যেখানে হেজবুল্লাহ, হামাস ও পিআইজে’র প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
২০০২ সালে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। ইয়াসির আরাফাতের সাথে ইরানের গোপন আতাতের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসে সিআই। ইরান থেকে আগত অস্ত্রবাহী জাহাজ কারিন এ’য়ের সাথে ইয়াসির আরাফাতের যোগাযোগ নিয়ে সিআই ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট বের করে। বুশ প্রশাসন আরাফাতকে অভিযুক্ত করে এবং পরবর্তীতে রামাল্লায় অবস্থিত তার হেডকোয়ার্টারের অনেকটাই ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ইয়াসির আরাফাতকে দুই বছর কারাবাসেও থাকতে হয়।
শায়েখ ইয়াসিন ও তার সাক্সেসর ড. আজিজ রানতিসিকে হত্যার পরে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইজ্রায়েল তাদের মিলিটারী বাহিনী সরিয়ে নেয়। ৩৮ বছর পরে গাজার ফিলিস্তিনিরা মুক্তি পায়। ২০০৬ সালের ২৬ জানুয়ারির নির্বাচনে হামাস বিজয়ী হয়ে ইসমাইল হানিয়ার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করা হয় যেই ঘটনা আমেরিকা, ইজ্রায়েল ও ফাতাহর জন্য খুব একটা সুখকর ঘটনা হয় না। তারপর থেকে ইরানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন বেড়ে যায় গাজায়। হামাসের হাই কমান্ডের নেতারা নিয়মিত ইরানভ্রমণ শুরু করে। হামাসের সরকার গঠনের পর থেকে গাজা উপত্যকায় ইজ্রায়েলের মিলিটারী ফোর্সের আক্রমণ বেড়ে যায়। ২০০৯ সালের গাজা যুদ্ধে ইজ্রায়েলের আক্রমণে প্রায় ১৪০০ গাজাবাসী শহিদ হয় যেই যুদ্ধ ইরানে পরিচিত “22-day War of Resistance” নামে। এর প্রতিবাদে দক্ষিণ লেবানন থেকে হেজুবুল্লাহ কয়েক দফা রকেট মিসাইল নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে ইরানে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
২০১১ সালের মোড় একটু ভিন্ন। শুরু হয় সিরিয়ায় শাসক বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ। এই গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশারকে সমর্থন দেয় রাশিয়া ও ইরানের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং স্বভাবতই, আসাদবিরোধী রেজিস্টেন্স ফোর্সগুলো সমর্থন পায় ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার। মজার ব্যাপার হলো, এ সময় হামাস ইরানের সাইড থেকে সরে গিয়ে সমর্থন দিতে শুরু করে আসাদবিরোধী শক্তিগুলোকে, মূলত সাধারণ জনগণকে। খালেদ মিশেলসহ হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া অ্যান্টি-আসাদ আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে হামাস তাদের হেডকোয়ার্টার ও গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় কাতারে শিফট করে। শিফট করার পরে কাতার মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট করতে থাকে হামাসকে। এতকিছুর পরেও ইরান হামাসের থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে না। তবে এই সময়ে পিআইজে’র সাথে ইরানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পিআইজে’র নেতারা আসাদ সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বেশ পরে হামাসও সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফেলে ইজ্রায়েল-প্যালেস্টাইন প্রশ্নে। এর পাশাপাশি ইরানের উদ্যোগে দ্য এক্সিস অব রেজিস্টেন্সে সিরিয়ান আরব রিপাবলিক, লেবাবনের শিয়া মিলিট্যান্ট গ্রুপ হেজবুল্লাহ এবং ফিলিস্তিনের অন্যান্য কিছু সংগঠনের সাথে হামাস যুক্ত হয় আমেরিকা ও ইজ্রায়েলকে রাজনৈতিক ও সামরিক উভয়ক্ষেত্রে প্রতিহত করার জন্য।
২০১২ সালে আট দিনব্যাপী গাজা যুদ্ধ “পিলার অব ডিফেন্স”-এ ইজ্রায়েলের মিসাইল আক্রমণে হামাসের মিলিটারী উয়িং আল কাসসাম ব্রিগেডের চিফ কমান্ডার আহমদ আল জাবেরি শহিদ হন। এই যুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হামাসকে ইরানের দেওয়া সামরিক সাহায্য। ইরানের তৈরী ফজর-৫ নামক এক রকেট ব্যবহার করে ইজ্রায়েলের রাজধানীতে আঘাত হানে হামাস এবং ইরানের সাথে সখ্যতার ব্যাপার আবার সামনে নিয়ে আসে। রয়টার্স মিডিয়া থেকেও প্রচার করা হয় যে, ২০১২ সালে গাজা থেকে নিক্ষেপকৃত রকেটগুলো ইরানের তৈরী। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে আবারও গাজায় মিসাইল আক্রমণ চালায় আইডিএফ। ইজ্রায়েল ডিফেন্স ফোর্স গানবট, ফাইটার জেট ও ট্যাংক নিয়ে গাজায় গ্রাউন্ড ক্যাম্পেইন চালায়। সেসময় ইরানের প্রেসিডেন্ট বিশ্বের সামনে ইজ্রায়েলের গণহত্যার ঘটনা তুলে ধরে।
ইরান সরকারের বাইরেও বেসরকারি সেক্টর থেকেও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বাড়তে থাকে। ফিলিস্তিনে ইরানের নেটওয়ার্কিং গ্রুপগুলোর মধ্যে আছে ইসলামিক রিভোলিউশনারি গার্ড কোর্পসের “মবিলাইজেশন রেজিস্টেন্স ফোর্স”। এই ফোর্সের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা নাকবি ঘোষণা দেন, “ফিলিস্তিনিদের জন্য ইরানের সমর্থন কখনোই কমবে না, সবসময় ইরান তাদের পাশে থাকবে” যার জন্যই হয়তো আমরা ২০২৩ সালে এসে ৭ অক্টোবর থেকে চলমান যুদ্ধের সাক্ষী হচ্ছি।।
রুবায়েত আলম, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র:
Hamas: Political Thought and Practice_ Khaled Hroub, Iran’s Relations with
Palestine: Past, Present, Future_ Seyed Ali Alavi
https://www.aljazeera.com/amp/news/2023/10/10/what-is-hezbollah-a-look-at-the-lebanese-armed-group-backing-hamas
https://www.ojp.gov/ncjrs/virtual-library/abstracts/abu-nidal-organization
https://www.aljazeera.com/amp/news/2022/9/25/hamas-restoration-of-ties-with-syria-maintains-interests
https://www.aljazeera.com/amp/news/2003/12/4/the-second-intifada