নওগাঁয় বিকাশের উদ্যোগে ও প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় বই বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেসময় আটটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে ৪ হাজার ১৭১টি বই তুলে দেওয়া হয়।
‘বই মানে জ্ঞানের ভান্ডার। বই মানুষের জীবনের প্রকৃত বন্ধু। বই পড়ার মধ্য দিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন ধারণা এবং নতুন জ্ঞানের অর্জন হয়। মননশীলতা, সৃজনশীলতা এবং মেধা বিকাশের পথ উন্মোচন হয়ে থাকে বই পড়ার মাধ্যমে।’ নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ বন্ধুসভার উপদেষ্টা কায়েস উদ্দিন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
সে সময় প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি ওমর ফারুকের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও রাণীনগর সরকারি কলেজের প্রভাষক বেলায়েত হোসেন, নওগাঁ প্যারিমোহন সাধারণ গ্রন্থাগারের সভাপতি কাজী জিয়াউর রহমান বাবলু, নওগাঁ বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুর রহমান, ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খালেকুজ্জামান আনসারী, নওগাঁ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক ও আশার আলো বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অছিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে নওগাঁর ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দুটি পাঠাগারের প্রতিনিধির হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। বই পেয়েছে নওগাঁ সদর উপজেলার প্যারিমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ ও বাছারীগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়, মহাদেবপুর উপজেলার হাজী ধনেজ উচ্চবিদ্যালয়, মান্দার বনগ্রাম ইসলামী ও বিজ্ঞান পাঠাগার এবং বৈদ্যপুর উচ্চবিদ্যালয়, নিয়ামতপুর উপজেলার গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালা ও রামনগর উচ্চবিদ্যালয়।
প্যারিমোহন সাধারণ গ্রন্থাগারের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি কাজী জিয়াউর রহমান ১ হাজার, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের পক্ষে শরিফুর রহমান ৪০০, বাছাড়ীগ্রাম উচ্চবিদ্যালয়ের পক্ষে মামুনুর রশিদ ৫০০, হাজী ধনেজ উচ্চবিদ্যালয়ের পক্ষে আহসান হাবীব ৪০০, বৈদ্যপুর উচ্চবিদ্যালয়ের পক্ষে শফিকুল ইসলাম ৪০০, রামনগর উচ্চবিদ্যালয়ের পক্ষে উজ্জ্বল চন্দ্র বর্মণ ৫০০, বনগ্রাম ইসলামী ও বিজ্ঞান পাঠাগারের পক্ষে অনিক মাহমুদ ৫৭১ এবং গুড়িহারী-কামদেবপুর আলোর পাঠশালার পক্ষে রাজিত দাস ৪০০ বই নেন। বই পেয়ে তাঁরা বিকাশ, প্রথম আলো ট্রাস্ট ও প্রথম আলো বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানান।
বই পেয়ে নওগাঁর প্রাচীন পাঠাগার প্যারীমোহন সাধারণ গ্রন্থাগারের সভাপতি কাজী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘অ্যান্ড্রোয়েট মোবাইল ফোন মানুষের হাতে হাতে আসার পর থেকে পাঠাগারে দিন দিন পাঠক কমে যাচ্ছে। লাইব্রেরীতে বই আছে কিন্তু ইদানিং বই পড়ার পাঠক পাওয়া সৃষ্টি করা। বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্ট সারাদেশে সুবিধাবঞ্চিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে বই দিচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। সেই উদ্দেশ্যটি নিশ্চয় পাঠক সৃষ্টির মাধ্যমে আলোকিত সমাজ গড়া। বই বিতরণের মাধ্যমে বিকাশ ও প্রথম আলো ট্রাস্ট আলোকিত সমাজ গঠনে অন্যতম বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন আমাদের কাজ হবে পাঠক সৃষ্টি করা। পাঠক সৃষ্টি করার জন্য সমাজের অগ্রসর সচেতন মানুষদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে ই-বুক ও ডিজিটাল মিডিয়া প্রচলিত হয়েছে। তারপরেও ছাপা বইয়ের আবেদন অপূরণীয়। ছাপা বইয়ের আবেদন কখনই কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পূরণ করতে পারবে না। স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় কাটালে চোখের ক্ষতি হতে পারে এবং মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু ছাপা বই পড়া চোখ ও মনের জন্য স্বাস্থ্যকর। ছাপা বইতে পৃষ্ঠা উল্টানোর মাধ্যমে নির্দিষ্ট তথ্য সহজে পাওয়া যায়, যা ডিজিটাল ফর্মেটে তা সহজ হবে না।’
চলতি বছর সারা দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঠাগার ও বৃদ্ধাশ্রমে মোট ১ লাখ ২০ হাজার বই বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে বিকাশ। তাদের এ উদ্যোগে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। যেকোনো ব্যক্তি চাইলে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে এ উদ্যোগে অংশ নিতে পারবেন।