রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত গণইফতারে দল-মত নির্বিশেষে সকলে অংশ নিয়েছেন। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে হামদ-নাত, কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সোমবার (১৭ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ফিল্ডে আয়োজিত এ ইফতারে কয়েক হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। এ সময়, হামদ-নাত পরিবেশন ও কোরআন তেলাওয়াতের সঙ্গে সঙ্গে শহীদ আবু সাঈদসহ জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে সকলে মিলে করেন ইফতার।
গণইফতার শেষে সরেজমিনে দেখা যায়, দল-মত নির্বিশেষে সকল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা একসঙ্গে হাসিমুখে ছবি তুলছেন, আলাপ করছেন। রাজনৈতিক অঙ্গণে এমন সম্প্রীতিময় দৃশ্য দেখে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের প্রশংসা ভাসান অনেকে। পরে হাফেজে কোরআনদের সঙ্গে ছবি তোলেন তারা।
এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বেরোবি শাখা সভাপতি সোহেল রানা বলেন, সফল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যেভাবে ছাত্রজনতার মধ্যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, তেমনি ঐক্য অটুট রেখে আমরা দেশ গঠনে অংশ নিতে চাই। এর আগে ছাত্র সংগঠনগুলো যেভাবে পাওয়ার প্র্যাকটিস করতো, তার পরিবর্তে বর্তমানে গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে ছাত্রদের হৃদয় জয় করে নেওয়া সম্ভব। সার্বিকভাবে ছাত্র সংগঠনগুলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গঠনমূলক কাজের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোকে আরও সুন্দর ও শিক্ষাপযোগী করে তুলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বেরোবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে কমবেশী সকল ছাত্রসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। ছাত্রদলও দেশ এবং জাতীর কল্যাণের জন্য সব সময় ঐক্যের পক্ষে। বেরোবি শিক্ষার্থীদের আয়োজনে গণইফতারে আমাদের অংশগ্রহণ প্রমাণ করে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করা ছাত্রসংগঠন। নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে ক্রিয়াশীল সকল ছাত্রসংগঠনের ঐক্য ও সহাবস্থানের জন্য বেরোবি ছাত্রদল কাজ করে যাবে ইনশাআল্লাহ।

ছাত্রদল কর্মী মো. ইয়ামিন জানান, সোমবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব সংগঠন একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আয়োজিত সম্মিলিত গণ ইফতারে অংশগ্রহণ করি। ইফতার শেষে আমরা শহীদ আবু সাঈদের বাবার সঙ্গে দেখা করে তার পরিবারের খোঁজখবর নেই। এরপর শিবিরের ভাইদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়।
ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ছাত্রদলের বন্ধুসুলভ সংগঠন উল্লেখ করে ইয়ামিন আরও বলেন, আমরা একসঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমাদের লক্ষ্য সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখা এবং কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আদর্শগত ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে আমরা সবাই বাংলাদেশি। দল-মত নির্বিশেষে আমাদের স্লোগান—সবার আগে বাংলাদেশ!
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেরোবির অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, পাঁচ হাজার মানুষের জন্য গণইফতারের আয়োজন করা হলেও তা ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আল্লাহর রহমতে সকলে মিলে একসঙ্গে ইফতার করতে পেরেছি আমরা। এর মাধ্যমে আমাদের ঐক্য ও দৃঢ়তা বাড়বে সেটাই আশা করি।
শিক্ষার্থীদের গণইফতার আয়োজন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের এ আয়োজন প্রশংসার দাবি রাখে। শহীদ আবু সাঈদের বৈষম্যবিরোধী ক্যাম্পাস, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ করবে।