বিশেষ প্রতিনিধি: পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর ফাঁস হওয়ার প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষ ব্যাংক থেকে ব্যাপক হারে টাকা তুলে নেয়। এর ফলে ২০২৪ সালের আগস্টে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় রেকর্ড ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকায়।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত হস্তক্ষেপে ব্যাংকিং খাতে আস্থা কিছুটা ফিরেছে গ্রাহকদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা পুনরায় ব্যাংকিং চ্যানেলে ফিরে এসেছে।
বিষয়টি সম্পর্কে খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকে আগে যেসব লুটপাট ও দুর্নীতি চাপা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকাশ্যে আসে। এর ফলেই আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংকগুলো হতে ব্যাপক হারে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন গ্রাহকেরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডিপোজিটের ওপর লোভনীয় সুদের হার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুষ্ঠু তদারকির কারণে মানুষ আবার ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছেন। যারা ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে আবারও অর্থ ফিরে আসছে। এতে করে তারল্য সংকটও উল্লেখযোগ্য হারে নেমে আসবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নগদ টাকার পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়তে থাকলেও ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে সেপ্টেম্বর থেকে তা হ্রাস পেতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানুষের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায়। যা গত ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতে ২০ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা হ্রাস পাওয়ার ঘটনাকে নির্দেশ করে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জানান, বিগত সরকারের আমলের শেষ দিকে ব্যাংকিং খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র সামনে আসতে শুরু করায় গ্রাহকেরা ব্যাংকগুলোর ওপর স্বাভাবিকভাবেই আস্থা হারিয়ে ফেলেন। ফলে সে সময় কিছু ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিলেও এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, তবে বর্তমানে অনেক ব্যাংক উচ্চ সুদের অফার দিচ্ছে। এ কারণে গ্রাহকেরা নতুন করে ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট করছেন। ফলে আগের তুলনায় ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা ক্রমেই সঞ্চয় ব্যবস্থায় ফিরছে।