পথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়,
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা —শামসুর রাহমান।
বাংলায় এসেছে স্বাধীনতা, বাঙালির সেই গৌরবদীপ্ত দিন। ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ২০০ বছর ইংরেজদের শোষণ আর ২৩ বছর পাকিস্তানি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। এই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে চিরস্মরণীয়, অনন্যসাধারণ একটি দিন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় দিনটি। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই স্বাধীনতা, এই দিনে জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করে বীর শহীদসহ মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাদের।
মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। আবার এই মাসেই বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বর হত্যাকাণ্ডের শুরু এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটিও দিয়েছেন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ৭ তারিখে। অর্থাৎ সবদিক থেকেই মার্চ মাস বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি অতুলনীয় এবং অবিস্মরণীয় মাস। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাও দেন ১৯৭১ সালের এই মার্চ মাসেই। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গণহত্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে হত্যা করা হয় অসংখ্য মানুষকে। একাত্তরের ২৫ মার্চের মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে এক হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল দেশের মানুষ। ওই দিন দিবাগত রাতেই (একাত্তরের ২৫ মার্চ) গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। তার আগেই বার্তা পাঠিয়ে দেন স্বাধীনতার ঘোষণার। “এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজ থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ।” এরপর গঠিত হয় প্রবাসী সরকার। তাদের নেতৃত্বে সংগঠিত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। জাতির পিতার নির্দেশে পরিচালিত নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি…। তবুও ওরা [বাঙ্গালি জাতি] গরিব, কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজকে এরা চেনে না, আর যত দিন চিনবে না এবং বুঝবে না তত দিন এদের মুক্তি আসবে না।’
নিজেকে চেনার এই দিবসটি আমাদের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞায় উদ্দীপ্ত হওয়ার ইতিহাস জানান দেয়। কারণ স্বাধীনতার অর্থ শুধু রাষ্ট্রীয় স্বাতন্ত্র্য নয়, স্বাধীনতা মানে সব ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্তি ও সুশাসনের নিশ্চয়তাও। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির ঘোষণা একই বাক্যে উচ্চারণ করেন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে তিনি শুধু আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তির ঘোষণাই দেননি, এতে নানা বিষয়ে তাঁর মৌলিক চিন্তার প্রকাশও ঘটে। তাঁর যাপিত জীবন, কর্ম ও আদর্শের অনুসন্ধানকালে তেমনইটাই দৃশ্যমান হয়।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে আমাদের সময় এসেছে ফিরে দেখার, যে মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সেদিন আমরা চেয়েছিলাম একটি স্বাধীন পুণ্যভূমি, বীর শহীদেরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে, এ দেশ কি তা দিতে পেরেছে? কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে আমরা কি পৌঁছাতে পেরেছি? এ ক্ষেত্রে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতামতও প্রণিধানযোগ্য। তাঁরা বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই দেশমাতৃকাকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্যে কলম ছেড়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিলেন। বর্তমান প্রজন্মকে অস্ত্র ধরতে হবে না। তাদের কলম যুদ্ধ করতে হবে, মেধার যুদ্ধ করতে হবে। সেই যুদ্ধ হবে দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে। আর সেই যুদ্ধের মাধ্যমে গৌরব ছিনিয়ে আনতে হবে।
লেখক: আকবর আলী রাতুল,
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
মার্চ’ই বঙালির অস্তিত্ব
Previous Articleছেলেকে গায়ক বানাবেন মাহিয়া মাহি!
পড়তে থাকুন
Add A Comment
আমাদের সেবা সমূহ
সম্পাদকঃ ইমরান খান নাহিদ
প্রকাশকঃ এরশাদুর রহমান রিফাত
৭৫৫, গ্রীন রওশন আরা টাওয়ার (সপ্তম তলা),সাত মসজিদ সড়ক, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫
ইমেইল: info@bdn71.com
ফোন: +88০১৭৭৪৪২৪৫৩৭
© All rights reserved BDN 71 ২০২৫