রাজন হোসেন তৌফিকুল, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃমৌলভীবাজারে মিছবাহকে হত্যাচেষ্টার বিবরণ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে আইডিতে পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন মিছবাহ এর ভাই মিল্লাত রহমান।
১১ এপ্রিল সোশ্যাল মিডিয়ার ফেসবুকে নিজে আইডিতে মিল্লাত রহমান লেখেন, মৌলভীবাজার বারের তরুণ আইনজীবী সুজন মিয়া হ’ত্যা এবং মিছবা (আমার ভাই)-কে নিয়ে বিস্তারিত ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়া আমাদের পাশের বাড়ির বাসিন্দা। কিছুদিন আগে কোনো এক তুচ্ছ কারণে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ড হয়।বাকবিতণ্ডের মূল কারণ ছিলো, নজির মিয়া বাড়িতে গরু পালন করতেন আর সেই গরুর গোমূত্র মিছবা ভাইয়ের ঘরের পাশ দিয়ে গড়িয়ে যেতো যার কারণে অতিরিক্ত নোংরা দুর্গন্ধ নাকে এসে লাগতো। এমতাবস্থায় মিছবাহুর রহমানের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করা দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছিলো।মিছবাহুর রহমান এই সমস্যার কথা নজির মিয়াকে বহুদিন জানিয়েছেন কিন্তু নজির মিয়া এতে ভ্রুক্ষেপ করেননি। উল্টো যা তা তর্কবিতর্ক করতেন।
এ ঘটনা মিছবাহুর রহমান এলাকার কয়েকজন মুরব্বিকে জানান এবং তাঁরা এর সুষ্ঠু মিমাংসা করবেন বলেও আশ্বাস দেন। এভাবেই চলছিলো সব। কিন্তু এই শত্রুতার জের ধরে যে নজির মিয়া মিছবাহুর রহমানকে খু/ন করার জন্য তলে তলে বুদ্ধি করছিলো তা মিছবাহুর রহমান বা তাঁর পরিবারের কেউই ভাবেনি। বিন্দুমাত্র টেরও পাননি।
এটুকু একটা বিষয় নিয়ে কেউ কাউকে মেরে ফেলতে চাইবে এটাতো ভাবনাতে আসার কথাও না। নজির মিয়া তার পূর্বপরিচিত রাজনগর উপজেলার মাথিউরা চা বাগানের লক্ষণ নাইডুর মাধ্যমে ভাড়াটিয়া খুনীদের সাথে মিছবাহকে মারার চুক্তি করেন এবং মোবাইলে টার্গেটের ছবি পাঠান
গত ৭ই এপ্রিল রাতে মৌলভীবাজার পৌরসভার সামনে ফুচকার দোকানে একটা খু/নের ঘটনা ঘটে।
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জানা যায় মৌলভীবাজার বারের আইনজীবী জনাব সুজন মিয়া-কে কয়েকজন দূর্বৃত্তরা স্টেপিং(ছুড়িকাঘাত) করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার উনাকে মৃ’ত ঘোষণা করেন। ব্যাপারটা খুবই মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক। উক্ত খবরটা জানার পর আমি স্তব্ধ হয়ে যাই কারণ সুজন ভাই আমার পরিচিত ছিলেন।
দেশে থাকাকালীন প্রায়ই ভাইয়ের সাথে আমার দেখা এবং টুকটাক খোশামোদী আলাপ হতো। নিউজটা আমার টাইমলাইনে শেয়ার করে প্রশাসনের কাছে আসামীদের গ্রেফতার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীও জানাই। কে জানতো সুজন ভাইয়ের জায়গায় আমার ভাইকে হ’ত্যার জন্য সন্ত্রাসীরা ষড়যন্ত্র করেছিলো?
৯ই এপ্রিল মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ওসি মোঃ মাহবুবুর রহমান আমার ভাই মিছবাহকে কল দেন।
উনি ফোনালাপে আমার ভাইকে বলেন, আপনি আলহামদুলিল্লাহ বলেন। আমার ভাই আলহামদুলিল্লাহ বলে জানতে চান এর কারণ কী। প্রতিউত্তরে ওসি সাহেব বলেন, আপনি সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। শুকরিয়া আদায় করেন, আপনার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে পারতো।
মিছবা ভাই বিনয়ী সুরে ওসি সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছে বলতে। ওসি মাহবুবুর রহমান ঘটনা না বলে মিছবাহ ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে চান, কারো সাথে তার কোনো মনমালিন্য বা ঝগড়াবিবাদ আছে কী-না।মিছবা ভাই এককথায় উত্তর দেন, না! আমার কারো সাথে তো এমন কিছুই নেই।(মিছবা ভাই ভুলেই গিয়েছিলেন সপ্তাহ খানেক আগে নজির মিয়ার সাথে তার বাকবিতণ্ডের ঘটনা। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক কারণ এটা তেমন বড় রকমের কিছু ছিলোনা।) এরপর ওসি সাহেব আবার বলেন,
আপনার পাশের বাড়ির কারো সাথে কী কিছুদিন আগে আপনার ঝামেলা হয়েছিলো? তখন মিছবা ভাইয়ের মনে পরে এবং বলেন হ্যাঁ! গরুর গোমূত্রের দুর্গন্ধ নিয়ে নজির মিয়ার সাথে একটু তর্কবিতর্ক বা চিল্লাফাল্লা হয়েছে। তারপর ওসি সাহেব বলেন, আচ্ছা!
আপনাকে আমাদের প্রয়োজন লাগতে পারে। ডাকালে আপনি আসবেন। উক্ত ফোনকলের পর আমার মেজো(মিছবা) ভাই বড় ভাই (রেদওয়ান)-কে জানালে বড় ভাই সাথে সাথে থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের সাথে সরাসরি দেখা করেন এবং বিস্তারিত ঘটনা জানেন।
সর্বশেষ খবর পাওয়া অবদি, মূল পরিকল্পনাকারীসহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ। বিচার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এমন অমানবিক ঘটনা দেশজুড়ে জানাজানি হয়ে গেছে। এ ঘটনায় পুরো মৌলভীবাজারবাসী মর্মাহত, শোকাহত। সবাই এই পাশবিকতার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
এলাকাবাসী খু/নীদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানাচ্ছেন। আমি আমার ভাই মিছবাহুর রহমান মিছবা-এর উপর এমন ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেইসাথে বিজ্ঞ আইনজীবী সুজন ভাইয়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। নিরপরাধ একটা মানুষের প্রাণ কেড়ে নিলো। আমার ভাইয়ের বদলে আরেকজন ভাই চলে গেলো।
আমার মায়ের বুক খালি করার ষড়যন্ত্রে আরেকজন মায়ের বুক খালি হলো। আল্লাহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকলকে এই শোক সইবার তৌফিক দান করুক, আমীন। ব্যক্তিগতভাবে আমি খু/নীদের ধিক্কার জানাই।
আইন এবং প্রশাসনের কাছে দাবী রইলো, খু/নীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন যেনো আর কেউ কখনো এরকম দুঃসাহস করার সুযোগ না পায়। কোনো নিরপরাধ মানুষ যেনো খু/ন না হয়। আমার ভাইয়ের উপর পরবর্তীতে যেনো আর কোনো আক্রমণ না হয়।
এদিকে আইনজীবী সুজন মিসকিলিংয়ের পর মিছবাহ কোথায় আছেন তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মিছবাহুর রহমান এর এরকম আড়ালে চলে যাওয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেকে।
অপরদিকে, মৌলভীবাজার এর সাধারণ মানুষ এমন হত্যাকান্ডের পর ভীতসন্ত্রস্ত। তারা হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছেন, যাতে শহরে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।