বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার আধুনিকায়নে এবার সরাসরি যুক্ত হচ্ছে চীন। ফলে কার্যত এই প্রকল্প থেকে বাদ পড়ছে ভারত। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব ভারতের ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেডকে (আইপিজিএল) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রকল্প নিয়ে আর কোনো আগ্রহ দেখায়নি ভারত।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করতে মোংলা বন্দর আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় এবং চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ চীনের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন করপোরেশনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তির আওতায় বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক সুবিধা সংযোজন ও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু করা হবে, যা বন্দরটিকে একটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব বন্দরে রূপান্তরিত করবে। ভবিষ্যতে এটিকে কোল্ড পোর্টে রূপান্তরেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এতে ৩৬৮ মিটার দীর্ঘ দুটি কনটেইনার জেটি নির্মাণ করা হবে এবং লোডেড ও আনলোডেড কনটেইনার সংরক্ষণের জন্য ইয়ার্ড তৈরি করা হবে।
পাশাপাশি জেটি ব্যবস্থাপনা ও ইকুইপমেন্ট পরিচালন অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৮ কোটি ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা এবং এটি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণে ভারতের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ভারতের বন্দর, শিপিং ও নৌপথমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল। তিনি জানান, ভারতের সাগরমালা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সহযোগী সংস্থা আইপিজিএল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৮ সালে হাসিনা সরকার ভারতের সঙ্গে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার আওতায় ২০২২ সালে ভারত পরীক্ষামূলকভাবে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহন শুরু করে।
মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণে চীনের অংশগ্রহণ নিয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন:
❝বিগত সরকারের সময় ভারত এই প্রকল্পে আগ্রহ দেখালেও বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা হয়নি। বন্দরের উন্নয়ন অনির্দিষ্টকাল ধরে আটকে রাখা সম্ভব নয়। প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরের মাধ্যমে প্রকল্পের অর্থছাড় দ্রুত হবে বলে আশা রাখছি আমরা।❞
তিনি মনে করেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিপণ্য, যেমন আম ও কাঁঠালসহ অন্যান্য পণ্য চীনে রপ্তানি করা সহজ হবে। পাশাপাশি, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যও আরও সম্প্রসারিত হবে।