ফেসবুকে ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে লাইভ ভিডিও করে শিশুদের বিকৃত উপস্থাপনা, বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, প্রাণনাশের হুমকি, মাদকসেবন ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ফের বিতর্কের কেন্দ্রে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কুলিয়ার মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাফিজ। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেবহাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পারুলিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামুন জানান, “মুস্তাফিজ নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে নিয়মিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন লাইভ ভিডিও করে সাধারণ মানুষের মানহানি করে। মূলত, চাঁদাবাজি এবং মাদক পরিবহন ও সেবনই তার প্রধান পেশা। আমি তার অপকর্ম নিয়ে কথা বলায়, সে আমার বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি দেয়।”
ঘটনার পরপরই ভীত সন্ত্রস্ত সাংবাদিক মামুন দেবহাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “এই ব্যক্তি সাংবাদিকতার নামে এলাকায় এক আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। নারী কেলেঙ্কারি, চাঁদাবাজি, মাদকসহ তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। সে যে কোনো মুহূর্তে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করতে পারে।”
অতীতে চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত মুস্তাফিজ:
মুস্তাফিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি এবং তার তৎকালীন স্ত্রী সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মিলি পুলিশের হাতে মাদক ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
সেই সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল—তালাকপ্রাপ্ত এক নারী মাসুরা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে তারা মাসুরার সাবেক স্বামী আলমগীর হোসেনের বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে দরজা ভাঙচুর, আলমারি ও শোকেস ভেঙে নগদ টাকা, জমির দলিল, সোনার গহনা এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুটপাট করেন। এ ঘটনায় আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে মুস্তাফিজ, মিলিসহ পাঁচজনকে আসামি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা করেন।
এছাড়া মুস্তাফিজের ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও ফুটেজ ২০২২ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা তার মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হিসেবে এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
শিশুদের নিয়ে বিকৃত লাইভ: উদ্বেগজনক প্রবণতা
সবচেয়ে গুরুতর ও নিন্দনীয় অভিযোগ হচ্ছে—সম্প্রতি মুস্তাফিজ লাইভ ভিডিওতে একাধিক শিশুকে সামনে এনে লজ্জাস্থান সংক্রান্ত আপত্তিকর প্রশ্ন করে, যা ‘শিশু পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধ আইন’, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ ও ‘শিশু আইন’-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমন বিকৃত মানসিকতা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সামাজিক বিকাশে মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে বলে মনে করছেন শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।
এক স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “ওনার মতো মানুষ যদি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয়ে ব্যবহার করে লাইভে শিশুদের নিয়ে এমন বিকৃত আচরণ করেন, তাহলে সমাজে নৈতিকতা বলে কিছু থাকবে না। এটা শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী রাখে।”
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কাম্য
এলাকাবাসী ও সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—এই ধরনের ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, “মুস্তাফিজুর রহমানের মতো ভুয়া পরিচয়ের ধারকরা সাংবাদিকতা পেশাকে কলুষিত করছে। প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষ আরও বিভ্রান্ত হবে।”
সাতক্ষীরা দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি গোলাম কিবরিয়া বলেন, শুনেছি মুস্তাফিজ নামে একজন বিভিন্ন জায়গায় লাইভ করে। অনেক স্পর্শকাতর বিষয়, যেগুলো লাইভ করা যায় না । সেই বিষয়গুলো লাইভ করে। ধর্ষণের শিকার নারীদের পর্যন্ত তার লাইভে আনে। তবে তার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে অভিযোগ করতে হলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে হবে এবং সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে আমরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।