আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচ। একইসঙ্গে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ২০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য একটি রোডম্যাপও দেখিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশের প্রত্যাশায় শিক্ষা বাজেট: আমাদের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী সূচনা বক্তব্য দেন, আর প্রাক-বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষা কনসালটেশন কমিটির আহ্বায়ক ড. মনজুর আহমদ ও সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষা খাতে বাজেটের পরিমাণ সংখ্যাগতভাবে বাড়লেও সামগ্রিক বাজেটের তুলনায় এর শতাংশ কমে গেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের ১১.৮৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়, যা আগের বছরের ১১.৫৭ শতাংশের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন:
❝বাজেট প্রণয়নের সময় রাজনৈতিক চাপ এড়িয়ে শিক্ষার জন্য একটি স্বচ্ছ ও সুসংগঠিত বাজেট ঘোষণা করা উচিত। পাশাপাশি শিক্ষা বাজেট কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, তার ওপর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সমস্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রসঙ্গ নিশ্চিত করা গেলে দেশের শিক্ষার মানোন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।❞
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
-
আধুনিক শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মানসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।
-
শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, যাতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট হন।
-
একটি স্বতন্ত্র শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন করা, যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত হয়।
-
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার জন্য বাজেট বরাদ্দ করা এবং প্রাক-বৃত্তিমূলক শিক্ষার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা।
এছাড়া, প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির পরিমাণ ৫০০ টাকা এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৭০০-১০০০ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের শিক্ষার্থী আন্দোলনে আহত বা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু করা ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবও উঠে এসেছে।
শিক্ষার্থীদের পুষ্টির মান উন্নত করতে ১১৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মধ্যাহ্নভোজ কর্মসূচি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এটি একবারে বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে, দারিদ্র্যপীড়িত ও প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোর জন্য বিশেষ প্রণোদনা কর্মসূচির বাজেট বরাদ্দের কথাও বলা হয়েছে।
এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।