সংস্কার করার যোগ্যতা এই সরকারের নেই: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার কোনোকিছুই সমাধান করতে পারছেন না এবং সংস্কার করার যোগ্যতা এই সরকারের নেই।
তিনি আরও বলেন, অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সসম্মানে বিদায় নিন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী স্বৈরচারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দোসরদের গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবিতে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে চায়। এতে করে দেশের শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। অতীতে শেখ হাসিনার সরকারও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের কলকারখানা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এখন বর্তমান সরকারকেও কি সেরকমই একটা সরকার মনে করবো? আমি বলবো- আগুনে হাত দেবেন না। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে কলকারখানা ধ্বংস করবেন না। মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি করবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনা করে তিনি বলেন, অনেকেই তাকে মাইনাস করার কথা বলছেন। কিন্তু এ ধরেনর চক্রান্ত দেশের ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই সহ্য করবেনা।
শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জনগণ যা চায় তা বুঝে অবিলম্বে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন দিন। ভোটারের বয়স ১৭ এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়স করতে চান ২১ বছর। দুটোই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা বলবো- দেশে কচিকাঁচার সংসদ গড়বেন না। আপনাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পাঁচ মাস ধরে কিছুই করতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা, নিত্যপণ্যের বাজার কোথাও শৃঙ্খলা আনতে পারছেন না। আমাদের মাঠে নামতে বাধ্য করবেন না। কারণ আমাদের মাঠে নামার অভিজ্ঞতা আছে। সুনাম রক্ষা করতে চাইলে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য কারও হাতিয়ার হবেন না।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছিল। মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। অতঃপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বতীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। কিন্তু আজ পাঁচ মাস হয়ে গেলেও সরকার কিছুই করতে পারেনি। আমি বলবো- টালবাহানা না করে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচিত সরকার। সেইসঙ্গে জুলাই আগস্টে ছাত্রজনতার গণহত্যাকারী পুলিশ ও প্রশাসনের দোসরদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনুন। মানুষ অক্সফোর্ড আর হার্ভার্ডের সংস্কার বোঝেনা। জনাব হুদা বলেন বঙ্গভবন হয়ে উঠছে বাংলার আরেকটি কাশিমবাজার কুঠি শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের অন্যতম দোসর চুপ্পো চুপি চুপি ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করছেন । অবিলম্বে গণহত্যাকারী সকল পুলিশ সদস্য এবং ফ্যাসিজমের দোসর প্রশাসনে গাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।.
সংস্কার করার যোগ্যতা এই সরকারের নেই: জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান
গোলাম মুহিউদ্দীন ইকরাম সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ভাঁওতাবাজির সংস্থার ছাড়েন। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কারই হবে সংস্কার। আপনারা জনআকাঙ্খা পূরণে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নইলে পরিণতি কী হয় আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে শিক্ষা নিন।
শেখ পরিবার দেশের জন্য কলঙ্ক বলপ মন্তব্য করে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান বলেন, শেখ পরিবারের বিচার করলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ফিরে আসতো না। আজও শেখ পরিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এই পরিবার দেশের আশা-আকাঙ্খা, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ সবকিছু ধ্বংস করেছে। এই পরিবারকে কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না। শেখ পরিবার বাংলাদেশের জন্য কলঙ্ক। বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে ষড়যন্ত্রের জননী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ভারত আমাদের বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড়া। সেখানে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকারকে বলবো- অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। বাংলাদেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিবেন না।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, অবিলম্বে সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তা না হলে দেশের চলমান সংকট সমাধান সম্ভব হবে না। শেখ হাসিনার পতনের জন্য দেশের ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। এখন জনআকাঙ্খা পূরণে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। না হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিবে। গরিব মানুষ কিন্তু সংস্কার বুঝে না। তারা চায় দুবেলা দুমুঠো খেয়ে নিরাপদে বাঁচতে। অতএব জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত করতে হবে।
তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের সিন্ডিকেট ও দোসররা এখনও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ষড়যন্ত্র করে নিত্যপণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্টে ফেলেছে। তারা দেশীয় পণ উৎপাদন ও নিত্যপণ্যের দাম কমাতে আহ্বান জানান।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ১২ দলীয় জোট প্রধান সাবেক মন্ত্রী জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মুহাম্মদ ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা শওকত আমিন, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির এম এ মান্নান, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ফিরোজ মো. লিটন এবং লেবার পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটু।