বিশেষ প্রতিনিধি: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
বুধবার (৯ এপ্রিল) প্রসিকিউশন আদালতে এই তথ্য উপস্থাপন করে। এর আগে সকালে মামলার ৪ জন অভিযুক্তকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতে হাজির হওয়া চার অভিযুক্ত হলেন—সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা মো. শফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ নেতা মো. ইমরান হোসেন।
মামলার প্রাথমিক শুনানিতে প্রসিকিউশন জানায়, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘটিত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার দায়েরকৃত মামলায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্তে অপরাধ সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক ভিত্তি পাওয়া গেছে।
এর আগে, গত ২ মার্চ আদালত ৪ জন আসামিকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দিয়েছিল।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। প্রতিবাদী ও নিরস্ত্র অবস্থায় থাকলেও পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরে সহপাঠীরা দ্রুত সাঈদকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আবু সাঈদের হত্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষরা রাস্তায় নেমে আসেন। আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয় এবং কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন গতি পায়।
পাশাপাশি, ঘটনার পর থেকে সারা দেশের সচেতন মহলে এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় দৃশ্যত অগ্রগতি দেখার দাবি জানান সবাই। প্রসিকিউশন আশাবাদী, এই মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে যাবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, নিহত আবু সাঈদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবুনপুর গ্রামের মো. মকবুল হোসেনের সন্তান। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।