দীর্ঘ ২৩ বছরের লড়াই সংগ্রামের ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশের মানচিত্র, পেয়েছি আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। আমাদের এ স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে এক মহানায়ক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ৩০লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২লক্ষ মা ও বোনের সম্রম। আমাদের আছে বীরত্ব গাথা ইতিহাস।
আমরা কিছুদিন আগেই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎযাপন করেছি। আজ পৌঁছেছি স্বাধীনতার ৫৩ বছরে। স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে তরুনদেরই। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে তরুণ প্রজন্ম; বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের চোখে আজ ও আগামীর বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আকবর আলী রাতুল।
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে অনেক কিছুই অর্জন করেছি আমরা। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সম্প্রতি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি উন্নয়নের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও তাতে শিক্ষার সকল উপকরণ সরবরাহ, বিশ্বের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন উপবৃত্তি শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষালাভে সহায়তা করে চলেছে। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সংযোজনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও উপকৃত হচ্ছে। গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন বৃদ্ধিসহ সরকারী-বেসরকারি চাকরিক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশের নাগরিকদের উন্নতি সাধন করেছে।
আগামী সময়ে আমি চাই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ হবে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির উদাহরণ। এ দেশে থাকবে রাজনীতির সুষ্ঠু চর্চা, থাকবে না অসুস্থ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। সব মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসাসহ তাদের মৌলিক অধিকার পাবে। বেক্তিস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারসমূহ নিশ্চিত হবে।
সুষ্মিতা মুনশি
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতা আমাদের সবার। ২০২৪ সালের ২৬মার্চ আমাদের এই স্বাধীনতা পা রাখল তার ৫৩বছরে। এই ৫৩ বছরে আমরা অর্জন করেছি অনেককিছু। সেই ১৯৭১ সালে যেখানে আমাদের দেশের অবস্থা হয়েছিল একটা ধ্বংসস্তূপ এর মত সেখান থেকে অনেকটা পথ পারি দিয়ে আজ আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে তাকালেই সেটি বোঝা যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার
যা ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ছিল ৮৮ মার্কিন ডলার। তথ্যপ্রযুক্তিতেও আমরা এখন অনেক এগিয়ে। বিদুৎ উৎপাদনে আমরা পারমানবিক শক্তি ব্যবহার করার চেষ্টা করছি। গড়ে তুলছি রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আমরা গড়ে তুলেছি কোটি মানুষের হাজার বছরের স্বপ্ন পদ্মা সেতু। চিকিৎসা ক্ষেত্র,নারী কর্মসংস্থান,কৃষি সহ প্রায় সকল খাতে আমাদের উন্নতি চোখে পরার মত।
এত সফলতার মাঝে আমাদের কিন্তু কিছু ব্যর্থতাও আছে।আমরা এখনো নারীদের প্রাপ্ত অধিকার পুরোপুরিভাবে দিতে সমর্থ হইনি।আমরা কৃষকদের ন্যায্য অধিকার দিতে ব্যর্থ। এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাই কে এক হতে হবে,কাজ করতে হবে একটি জাতি হিসেবে। আমরা ইতোমধ্যে পার করেছি স্বাধীনতার ৫৩ বছর, আরো অনেক পথ পারি দেওয়া বাকি।আমরা সবাই একসাথে কাজ করে আমাদের দেশকে আরো অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যাব সেই প্রত্যাশা করি।
সাবিহা তামান্না
শিক্ষার্থী, ফলিত গনিত বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে বাঙালির জীবনে। এই মার্চ মাসে বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে উদিত হয়েছিল এক নতুন সূর্য। এই রক্তমাখা লাল বিজয়ের পরেই সব বাঙালি উঠে পড়ে লেগেছিল পাক বাহিনীর দুমড়ে মুছড়ে রেখে যাওয়া দেশটাকে একটা নতুন রূপ দিতে। আজ ৫৩ বছর পর আমরা কি সত্যিই পেরেছি নতুন রূপ দিতে? হ্যাঁ, পেরেছি; আজ আমাদের অর্জন কম নয়। আমরা অহংকার করি ।আমরা গর্ব করি। যে বাংলাদেশ একসময় “তলাবিহীন ঝুড়ি” হিসেবে খ্যাত ছিল সেই বাংলাদেশ আজ সক্ষম হয়েছে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করে তাক লাগিয়ে দিতে। আমাদের সবথেকে বড় অর্জন আমরা আগে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে খ্যাত ছিলাম কিন্তু বর্তমানে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। দারিদ্র্য বিমোচন ,গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশু ও মাতৃহারমৃত্যুর হার কমানো সহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সাফল্য বর্তমানে দেখার মত। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, উড়াল সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ম্যারিন ড্রাইভ এগুলোর মতো সাপ্নিক জিনিসকে বাঙালি আজ পেরেছে বাস্তবে রূপদান করতে। অল্প আয়তন ও ঘনজনসংখ্যা নিয়েও বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে।
কিন্তু এতসব অর্জনের ভেতরে না পাওয়া কি কিছুই নেই?? বিজয় এর মধ্য দিয়ে যা কিছু অর্জন করতে চেয়েছিলাম তা কি আসলেই অর্জন করতে পেরেছি, বা পারলেও তাকে রক্ষা করতে পেরেছি? ২০২৩ এ এসেও আমাদের কানে আজও আসে হাহাকার আর্তনাদের চিৎকার এখনো আমরা শুনতে পাই মানুষের খেতে না পারার আর্তনাদ। খেতে না পারার আর্তনাদ কি পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে কম কিছু। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে না খেয়ে আছে আজ শত শত মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ ও জনসাধারণের কাছে এ যেন এক অভিশাপের মত। উন্নয়নের মাঝেও এই সমস্যাটার সমাধান করা যেন এখন সময়ের দাবি। পড়ে যায় কমলাকান্তের দপ্তর থেকে নেওয়া সেই উক্তিটির কথা “আমি যদি খাইতেই না পাইলাম সমাজের উন্নতি লইয়া আমি কি করিব?” তাই এই বিজয়ে আমার একটাই চাওয়া সবার মুখে খাদ্য নিশ্চিত করা হোক। সিন্ডিকেট, কালোবাজারি, মানি লন্ডারিং ,দুর্নীতি এগুলো শক্ত হাতে দমন করা হোক। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য মানুষের নাগাল এর ভেতরে রাখা হোক। এই বিজয়ে আমাদের অঙ্গীকার হোক আমরা যেন পেছনে না হটি। বিজয়ের চেতনা বুকে ধারণ করে বিজয়কে শক্ত হাতে রক্ষা করি।
উম্মে সাদিয়া ফরাজি নিশা
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রসত্ত্বা গুনে গুনে তার স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। পেছনের ৫২ টি বছর তো আর কম নয়। একটা যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমাদের জীবনযাত্রার মান বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যাবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা-কক্সবাজার রেলসংযোগ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়েসহ অনেক অনেক মেগাপ্রকল্প চালু হয়েছে এছাড়াও সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যপক উন্নয়ন কাজ চলমান। ঠিক তেমনিভাবে আইসিটি খাতেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যহত রয়েছে, ইতিমধ্যেই আমরা পেয়েছি নিজস্ব স্যাটেলাইট- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা থাকলেও পূর্ববর্তী আর্থিক ভঙ্গুরতা কাটিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখায় সরকারের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বিজয়ের যা কিছু অর্জন সেসব ব্যাতীত বিজয়ের ১০০ বছরে বাংলাদেশ পৃথিবীর যে কোনো দেশের সাথে অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।
তাওফিক আহমেদ
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।