রুশাইদ আহমেদ: গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর থেকেই দেশ ছেড়ে পালান দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তৎক্ষণাৎ কারো কোনো হদিস পাওয়া না গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পলাতক উচ্চ পর্যায়ের আ. লীগ নেতাদের বর্তমান অবস্থানের প্রসঙ্গ সামনে আসতে শুরু করে।
ভারতের কলকাতা ও দিল্লি এখন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা ও মন্ত্রীদের অন্যতম বড় আস্তানা। খোদ শেখ হাসিনাও আছেন সেখানেই। এ ছাড়া, দুবাই, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়েছেন দলটির বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা।
মূলত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশত্যাগ করেন বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতা। তবে শেখ পরিবারের কয়েকজন এর আগেই পালিয়ে যান বলে জানা যায়। এই তালিকায় সর্বশেষ যোগ দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। চিকিৎসার কথা বলে থাইল্যান্ড গেলেও স্থায়ীভাবে দিল্লিতে অবস্থান নিচ্ছেন তিনি।
৫ আগস্ট রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের বাংকার থেকে উদ্ধার হওয়া সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এখনো ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থান করছেন।
শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আলোচনায় বাইরে আছেন আওয়ামী লীগের আরেক শীর্ষ নেতা তোফায়েল আহমেদ। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন আমির হোসেন আমু, সালমান এফ রহমান, ডা. দীপু মনি, শাজাহান খান, ফারুক খান, জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ অনেকে।
গণমাধ্যমে আসা তথ্য মোতাবেক, জুলাই বিপ্লবের পর নিরাপত্তা চেয়ে সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৬২৬ জন। পরে ৬১৫ জন স্বেচ্ছায় সেনানিবাস ছেড়ে যান। তাদের মধ্যে ২৪ জন রাজনীতিক, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ৪৮৭ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।
যশোরের বেনাপোল, আখাউড়া, সিলেট, ফেনী ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়েও পালিয়েছেন শত শত আওয়ামী নেতা। এ নিয়ে কলকাতা পুলিশের তালিকায় রয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তফাজ্জ্বল হোসেন মায়া, বাহাউদ্দিন নাছিম, নওফেলসহ দুই শতাধিক নেতার নাম।
পাশাপাশি, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কম্বোডিয়ায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কলকাতায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ তাপস লন্ডনে, পরশ কানাডায়, শামীম ওসমান যুক্তরাষ্ট্রে, মুস্তফা কামাল দুবাইয়ে, ফজলুল করিম সেলিম দিল্লি-কলকাতায় অবস্থান করছেন।
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত, বিপ্লব বড়ুয়া, আমিনুল ইসলামও যুক্তরাষ্ট্রে বসে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠরাও পালিয়ে এখন কেউ ভারতে, কেউ মালয়েশিয়ায়, কেউ স্পেনে অবস্থান করছেন। অনেকে ‘র’-এর সহায়তায় ভারতের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে করছেন লিয়াজোঁ।
ইতিমধ্যে এ সব পলাতক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে গণহত্যা, গুম, খুন, দুর্নীতি ও লুটপাটের অসংখ্য মামলা। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করারও চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার৷ কিন্তু ১৬ বছর ধরে প্রবল ক্ষমতার প্রতাপে থাকা পলাতক এই বাঘা বাঘা আওয়ামী নেতৃবৃন্দকে সত্যিই বিচারের আওতায় আনা যাবে কি-না সে প্রশ্ন রয়েই যায়!