৬ ঘন্টার মধ্যে রাবি সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া ও আইন অনুষদের ডীন আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদের পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়ে তাকে বিভাগ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২ টায় বিভাগের সামনে থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা অবস্থান নিয়ে এই দাবি জানিয়েছে ।
এসময় তাদের হাতে প্ল্যাকার্ডে ধর্ষণ কে সহায়তা করা ধর্ষণের সামিল, সেইভ আওয়ার ফিমেল স্টুডেন্টস, সেইভ মাই ফিমেল স্টুডেন্টস , নিপীরক বাইরে কেন? প্রশাসনের জবাব চাই, ধর্ষকের শাস্তি চাই বিভিন্ন লেখা দেখা যায় ।
এসময় তারা জানান সহযোগী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলেন তারা। তবে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদ সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ায় তিনি সাদিকুল ইসলাম সাগরের পক্ষ নিয়েছেন। তাই তারা সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ ডিনের পদত্যাগের দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জুলফিকার আহমেদ বলেন, সাগরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বিভাগের শিক্ষকরা একটি জরুরী মিটিং করি। সেখানে একটি তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়। যেখানে সাদিকুল ইসলাম সাগরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ একটি দুটি নয় একাধিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এই ফ্যাসিবাদ সরকারের যারা বিভিন্ন পদে ছিল, গত ১৫ বছরে তারা প্রত্যেকেই সেই পদের অপব্যাবহার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদেরকে সাগর ধর্ষণের ফলে শিক্ষকদেরকে নিপীড়কের স্থানে নিয়ে গেছে,যা শিক্ষক হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি ধর্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিণত হয়েছে। কারণ বিভিন্ন বিভাগে ধর্ষকের চেহারা দেখতে পাচ্ছি। আমরা আশঙ্কা করছি, আমাদের ভিসি স্যারকে ফ্যাসিবাদের ধূসররা স্বাধীন মত কাজ করতে দেয় না। আমাদের সত্য অনুসন্ধানের কাজকে যারা প্রত্যাখান করেছে, আমরা তাদের ঘৃণা ভাবে প্রত্যাখ্যান এবং এই সিন্ডিকেটকেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
এসময় আইন বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক মুরশিদুল ইসলাম পিটার বলেন, ছাত্রদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার (সাদিকুল সাগর) বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটিতে গিয়ে দেখি সে একটা নয় একাধিক ধর্ষণ করেছে। যদি সে আরেকটু সময় পেতো তাহলে তা ১০০ অতিক্রম করে যেতো। এটা কি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়! যেখানে ১০০টা ধর্ষণ করার পরও ভিসি, প্রো-ভিসি তার বিরুদ্ধে কোনো একশন নেয়নি। আমাদের অনুষদের ডীন বর্তমানে সিন্ডিকেট মেম্বার যিনি ডিপার্টমেন্টে বলেন, ‘জিরো টলারেন্স’। কিন্তু এতো অভিযোগের পরও তিনি সাদিকুল সাগরের বিষয়ে কেন নিরব?
এব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন,আইন বিভাগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যাছাই-বাছাই ও পরীক্ষা করে যৌন নিপীড়নের যে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়েছে এবং এটিকে ভালোমতো তদন্ত করার জন্য যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠিয়েছে। আইন বিভাগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে পরীক্ষা, বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সেটা সিন্ডিকেটে গৃহীত হয়েছে।
এসময় তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর,প্রো- ভাইস চ্যান্সেলর না থাকলেও দপ্তরগুলো ঠিকই ছিল। যৌন নিপীড়ন সেল থাকলেও সেখানে সদস্যরা নেই। আমি উপাচার্য স্যারকে আপনাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি ফিরে এসে প্রথম কার্যদিবসের মধ্যেই যৌন নিপীড়ন সেল নতুন করে তৈরি করার কথা জানিয়েছেন। আমার মনে আমাদের অপেক্ষা করা উচিত যে আমাদের যৌন নিপিড়ন সেলের তদন্ত কমিটি গঠন হয় কিনা, এ বিষয়গুলো তদন্ত কমিটিতে যায় কিনা সে বিষয়গুলো পরবর্তীতে না হলে আপনারা যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আমরা চাই ২৪ এর বিপ্লবের যে চেতনা সে চেতনা আমরা সবাই ধারণ করি। আমরা বৈষম্য যেমন চাই না, ঠিক তেমনি যৌন নিপীড়কও চাইনা।
এবিষয়ে জানতে চেয়ে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মোহাম্মদ ওয়াহিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন একটি মিটিংয়ে আছি। আমি তাদের অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানি না।