সমন্বয়কদের জোরপূর্বক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকাশ্যে ক্ষমাসহ নয়-দফা দাবিতে পূণরায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার(২৯জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিনোদপুর পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী সজিব বলেন, পুলিশের গুলি জনগণের টাকায় কেনা, অথচ সেই গুলি তারা জনগণের উপর চালায়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্রদের হত্যা করেছে। সমন্বয়কদের জোর করে তুলে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এসব ঘটনা ছাত্রসমাজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব এবং আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসুদসহ আরও অনেকে অংশ নেন।
ড. নকীব বলেন, এই মূহুর্তে আমরা রক্তের উপর দাড়িয়ে আছি। নতুন করে আর কোন মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু যারা ন্যায়ের পক্ষে, ন্যায্যতার পক্ষে এবং অধিকারের পক্ষে, তারাই আজকের সময়ের মুক্তিযোদ্ধা। যারা মানুষের অধিকার হরণ করে, মানুষের রক্তের কোনো মূল্য দেয় না, এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে নয়, তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলা একেবারেই বেমানান শোনায়। এই চেতনাবাদ বন্ধ হোক ও প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অন্য দাবিগুলো হলো: আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মন্ত্রীপরিষদ এবং দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে ; ঢাকাসহ যত জায়গায় শহিদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরদের পদত্যাগ করতে হবে; যে পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর গুলি করেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ যে সকল সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলা পরিচালনা করেছে এবং অভিযুক্তদের আটক করে এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; দেশব্যাপী যে সকল শিক্ষার্থী ও নাগরিক শহিদ ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনসহ সকল দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্রসংসদকে কার্যকর করতে হবে; অবিলম্বে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে এবং কোটা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার করতে হবে।
দীন ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়